অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় মাথা ঘোরা বা চারপাশ ঘুরছে এমন অনুভবের সম্মুখীন হন। এই অবস্থা অনেক সময় অস্বস্তিকর, বিভ্রান্তিকর, এবং কখনও কখনও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অভিজ্ঞতার নামই হলো ভার্টিগো (Vertigo)।
ভার্টিগো নিজে কোনো রোগ নয় বরং অন্য একটি শারীরিক সমস্যার লক্ষণ। বিশেষ করে এটি হয় অন্তঃকর্ণ (Inner Ear) এবং শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার ফলে।
ভার্টিগো কী?
ভার্টিগো হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মনে হয় নিজে অথবা চারপাশ ঘুরছে। এ অবস্থায় রোগী স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেও মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, বা চক্কর লাগা অনুভব করেন।
শরীরের ভারসাম্য রক্ষার কাজটি করে:
অন্তঃকর্ণ (Inner Ear)
চোখ
মস্তিষ্কের বিশেষ অংশ
এসবের কোনো স্থানে সমস্যা হলে ভার্টিগো হতে পারে।
ভার্টিগো কেন হয়? — প্রধান কারণসমূহ
1. BPPV (Benign Paroxysmal Positional Vertigo)
ভার্টিগোর সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
অন্তঃকর্ণে থাকা ক্যালসিয়াম কণিকা স্থানচ্যুত হলে মাথা ঘোরে, বিশেষ করে:
ঘুম থেকে ওঠার সময়
মাথা বাঁকানো বা উঁচু-নিচু করার সময়
2. ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস (Vestibular Neuritis)
অন্তঃকর্ণের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতে ভাইরাস সংক্রমণ হলে এই সমস্যা হয়।
3. মেনিয়ের’স ডিজিজ (Meniere’s Disease)
অন্তঃকর্ণের ফ্লুইড অস্বাভাবিক হয়ে গেলে দেখা যায়।
লক্ষণ:
মাথা ঘোরা
কানে বাজা (Tinnitus)
শ্রবণ কমে যাওয়া
4. মাইগ্রেন
অনেকেই মাইগ্রেনের সাথে ভার্টিগো অনুভব করেন।
আলো/শব্দে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
5. মাথায় আঘাত
মাথায় আঘাত পেলে অন্তঃকর্ণ বা মস্তিষ্কে ভারসাম্যজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
6. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়ুরেটিকস, বা নিউরোলজিক্যাল ওষুধ ভার্টিগো সৃষ্টি করতে পারে।
7. লো ব্লাড প্রেশার বা ডিহাইড্রেশন
রক্তচাপ কমে গেলে বা শরীরে পানি কমে গেলে মাথা ঘোরা হতে পারে।
ভার্টিগোর লক্ষণসমূহ
মাথা ঘোরা বা চক্কর
ভারসাম্য হারানো
বমি বা বমি ভাব
কানে ভোঁভোঁ শব্দ
চোখের বল দ্রুত নড়াচড়া (Nystagmus)
হাঁটতে অসুবিধা বা দুর্বলতা
ভার্টিগো কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
চিকিৎসক নিচের পরীক্ষাগুলো করতে পারেন:
| পরীক্ষা | উদ্দেশ্য |
|---|---|
| ইএনটি পরীক্ষা | অন্তঃকর্ণের সমস্যা শনাক্ত |
| অডিওমেট্রি টেস্ট | শ্রবণ ক্ষমতা যাচাই |
| ডিক্স-হলপাইক টেস্ট | BPPV পরীক্ষা |
| MRI / CT Scan | মস্তিষ্কে কোনো সমস্যা আছে কিনা যাচাই |
ভার্টিগো প্রতিরোধের উপায়
দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন
হঠাৎ মাথা ঘোরানো বা নিচু অবস্থান পরিবর্তন এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল ও ধূমপান কমিয়ে দিন
স্ট্রেস কম রাখুন
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
ব্যালান্স ব্যায়াম করুন
ভার্টিগোর চিকিৎসা
চিকিৎসা কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত নিচেরগুলো করা হয়:
ওষুধ
মাথা ঘোরা কমানোর ওষুধ
বমি ভাব কমানোর ওষুধ
ইপলি ম্যানুভার (Epley Maneuver)
BPPV রোগীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর হাতেকলমে থেরাপি।
ভেস্টিবুলার রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি
বিশেষ ব্যালান্স থেরাপি যা নড়াচড়া ও ভারসাম্য উন্নত করে।
সার্জারি
খুব জটিল বা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় প্রয়োজন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন — ডা. সজীব সাহা
আপনার যদি ভার্টিগোর লক্ষণ থাকে, দেরি না করে বিশেষজ্ঞ দেখান।
ওয়েবসাইট: https://drsajibsaha.net
কল করুন: 01915 88 66 55
ইমেইল: [email protected]
✅ অভিজ্ঞ ইএনটি ও ভেস্টিবুলার বিশেষজ্ঞ
✅ রোগীভিত্তিক সঠিক মূল্যায়ন ও চিকিৎসা
✅ উন্নত ব্যালান্স থেরাপি
শেষ কথা
ভার্টিগো এমন একটি অবস্থা যা জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলতে পারে। তবে সঠিক নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন করলে এই সমস্যা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকুন—সুস্থ থাকুন। 💚
